সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ক্রসবার-৩ ও ৪নং এলাকার মাঝামাঝি রয়েছে যমুনা নদীর পশ্চিম তীর। এখানে থাকা প্রায় এক হাজার একরের জমিটি স্থানীয়ভাবে চায়না বাঁধ নামে পরিচিত। বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মধ্যে সঠিক পরিকল্পনা এবং সমন্বয়ের অভাবে ৬৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করা প্রকল্পটিতে এখন দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে কিছু ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এতে জমি নিয়ে জটিলতা দিন দিন গুরুতর হচ্ছে। জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি অমীমাংসিত থাকলে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পাউবো জানিয়েছে, জমিগুলোর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন এটি জেলা প্রশাসনের আওতায়। জেলা প্রশাসন অবশ্য ভূমি জটিলতার বিষয়টি সামনে এনেছে। তারা বলছে, ভূমি জরিপের জন্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ‘প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল সুরক্ষা এবং যমুনা নদী থেকে পুনরুদ্ধারকৃত জমি উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তখন জেলার ১,১৫৬ একর জমি ভরাট করতে ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৪ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার জমির মাটি ভরাট করতে ২৯৪.৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল, যেখানে ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় ২০১.২৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। এ ছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রকল্পটির কাজ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শুরু হয়, শেষ হয় ২০২৩ সালে। এই প্রকল্পের জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছিল মোট ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ১১৫৬ একর জমির মধ্যে ৯৯২ একর জমি ব্যবহার উপযোগী করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো কিছুই হয়নি। বর্তমানে ৯৯২ একর জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জায়গায় অনেকেই বাড়িঘর তুলে বসবাস করছেন।
এদিকে স্থানীয় পুঠিয়াবাড়ি, রায়পুর, বিয়ারা, ছোটপিয়ারি, বড়পিয়ারি, বনবাড়িয়া, মোরগ্রাম, বেলটিয়া এবং রামগতি এই ৯টি মৌজায় অবস্থিত ৯৯২ একর জমির মধ্যে প্রায় ৬৪৩ একর জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দাবি করা হয়েছে। মাটি ভরাটের পর জমি অধিগ্রহণ ও মূল্য পরিশোধ ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে জমির মালিকদের এক প্রকার নীরব বিরোধ চলতে থাকে। এ বিষয় নিয়ে নানা সময় ভুক্তভোগী জমির মালিকরা তাদের জমির অধিকার ফিরে পেতে বা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ সব ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির সাবেক সদস্যসচিব নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘বিশাল এলাকাজুড়ে অব্যবহৃত জমি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় সেগুলো দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের মরুভূমির মতো জমি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। যদি এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপার্ক বা অন্য কোনো স্থাপনা করা হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
এর আগে চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ নজরুল ইসলাম ক্রসবার-৩-এর কাছে যমুনা ইকো শিশুপার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য জমির একটি অংশে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন নিজেদের জমির মালিক দাবি করা কিছু ব্যক্তির মধ্যে উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, ৮ সেপ্টেম্বর, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা প্রস্তাবিত স্থানে ভিত্তিপ্রস্তর এবং সাইনবোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদিও পরে এটি পুনরুদ্ধার করা হয়।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এখন ওই জমির ওপর আমাদের কিছু করার নেই। এটি এখন জেলা প্রশাসনের এখতিয়ারাধীন।’ জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওখানে ভূমি জটিলতা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এ বিষয়ে ভূমি জরিপ করার জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো লুৎফর রহমান লিটন
প্রধান উপদেষ্টা (০১) উপদেষ্টা : এ্যাডঃ আসাদ উদ্দিন
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
উপদেষ্টা
এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ ও মোঃ মিজানুর রহমান মিজান।
প্রধান কার্যালয় : সলংগা ৬৭২১সিরাজগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার : ০১৭১১৪৫৪০১৮
মেইল :daliyalokitosolanganews@gmail.com
Design & Development By HosterCube Ltd.