মোঃ মিজানুর রহমান
সিরাজগঞ্জ
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে হটাতে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ধীরে ধীরে সেই ঐক্যে ফাটল ধরতে থাকে। দলগুলো নিজ নিজ এজেন্ডায় ফিরে গিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দ্রুততম সময়ে নির্বাচনে জোর দেয় বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বিচার ও সংস্কারের দাবি নিয়ে এগোতে থাকে। পরে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরো কয়েকটি দল নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কারের দাবিতে সরব হয়।
এদিকে গত এক বছরে মাঠের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে বিএনপি। যদিও দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এখনো দেশের বাইরে আছেন। তবে লন্ডন থেকেই তিনি দলকে পরিচালনা করছেন। কিন্তু দলটির মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর অপকর্ম দলটির ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে দখলবাজি, চাঁদাবাজির সঙ্গে দলটির কিছু নেতা জাড়িয়ে পড়েছেন। বিপরীতে কৌশলী রাজনীতির পথে হাঁটছে জামায়াত। নির্বাচন সামনে রেখে দলটিও মাঠ গোছাচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত মাঠের রাজনীতি পাশাপাশি প্রশাসনেও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে জামায়াত খুব কৌশলে এগোচ্ছে। তারা প্রশাসনে নিজেদের মতাদর্শের লোকজন বসাতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। এ ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদেও জামায়াতপন্থিদের আধিপত্য রয়েছে। এতে নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে দলটি।
অন্যদিকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠ দখলে মরিয়া। বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে দলটি সব সময় মাঠে থাকছে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলসহ নানা কার্যক্রম ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বিএনপি। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা করায়ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকছেন। তবে জামায়াত ফ্যাসিস্টবিরোধী কথা বললেও এসব বিষয়ে তাদের খুব একটা ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। এ মিছিল ঠেকাতে রাস্তায় নামে বিএনপির নেতাকর্মীরাও। কিন্তু জামায়াতকে এ সময় মাঠে দেখা যায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট পতনের পর থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যত দিন গড়াচ্ছে দলটির ঝটিকা মিছিল তত বাড়ছে। এমনকি বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করছে পতিত শক্তিটি। গ্রেফতার করেও তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া এ বিষয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাও লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধের ভূমিকা পালন করছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ। এ সময় বাইক থেকে নেমে এক ব্যক্তি মিছিলটিকে ধাওয়া করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি স্থানীয় যুবদল নেতা। এর আগেও বিভিন্ন সময় পতিত শক্তিকে ঠেকাতে মাঠে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের।
সম্প্রতি সমাপ্ত ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিবিরসমর্থিত প্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছিল ছাত্রদল। জাকসুতেও একই ধরনের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল।
এ বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর জামায়াতের লোক। বিভিন্ন কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ও উচ্চ আদালতের বিচারক বা নতুন যারা যাচ্ছেন তারাও জামায়াতের লোক। তবে আমরা জামায়াতের বদনাম করছি না, শুধু দুই জায়গায় পার্থক্য দেখাচ্ছি। তিনি বলেন, আজ পটুয়াখালীতে আমরা বাসস্ট্যান্ড দখল করছি, লঞ্চঘাট দখল করছি, ফেরিঘাট দখল করছি। আর জামায়াত বিশ্ববিদ্যালয় দখল করছে। তফাৎ দেখছেন? খালি নেতা হলেই হবে না, নেতার কোয়ালিটি থাকতে হবে।
এর আগে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় এক মতবিনিময় সভায় আলতাফ হোসেন বলেন, পটুয়াখালীতে এখন আর আওয়ামী লীগ নেই। চাঁদা দিয়ে সব বিএনপি হয়ে গেছে। এ ছাড়া মির্জাগঞ্জ উপজেলায় আয়োজিত সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের গোবর খাইয়ে পবিত্র করে তারপর দেশে আনা হবে।
এদিকে বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত নেতা ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ফজলুর রহমান জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান দখল করে তারা শক্তিশালী হয়েছে। তারা টাকা-পয়সার মাধ্যমে তরুণ সমাজের একটা অংশকে যে কোনোভাবে কনভিন্স করে আজকে একটা শক্তি নিয়ে সামনে এসেছে। সারা বাংলাদেশের এসিল্যান্ড থেকে ইউএনও, ওসি-ডিসি যা আছে ওপরের সচিব পর্যন্ত সব প্রশাসন তারা দখল করেছে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, শেয়ার মার্কেট, হসপিটাল, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন সবকিছু দখল করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো লুৎফর রহমান লিটন
প্রধান উপদেষ্টা (০১) উপদেষ্টা : এ্যাডঃ আসাদ উদ্দিন
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
উপদেষ্টা
এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ ও মোঃ মিজানুর রহমান মিজান।
প্রধান কার্যালয় : সলংগা ৬৭২১সিরাজগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার : ০১৭১১৪৫৪০১৮
মেইল :daliyalokitosolanganews@gmail.com
Design & Development By HosterCube Ltd.